![]() |
একবার মায়ের দিকে, আরেকবার দোকানির মুখের দিকে তাকাচ্ছিল শিশুটি। তার ছোট্ট পায়ের মাপের একটির পর একটি স্যান্ডেল (জুতা) বের করছেন দোকানি। কিন্তু মনমতো হচ্ছে না। ঈদের জন্য পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে জুতা কিনতে চাইছে শিশুটি। শেষ পর্যন্ত মা-ছেলের পছন্দমতো পাওয়া গেল জুতা। দুই পায়ে নতুন জুতা পরে দোকানে কিছুক্ষণ হাঁটল শিশুটি। চকচকে নতুন জুতা পেয়ে তার চোখমুখে খুশি। দাম পরিশোধ করার পর জুতার ব্যাগ নিজের কাছেই রাখল শিশুটি।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের একটি জুতার দোকানে মা-বাবা-খালার সঙ্গে এসেছিল চার বছরের সামিউল। সামিউলের মা জানালেন, ছেলের তর সইছিল না, তাই আগেভাগেই ঈদের জুতা কিনে দিয়েছেন।
ঈদের মতো উৎসবে অনেক ক্রেতা দুই জোড়া জুতা কেনেন, এমনটাই জানালেন দোকানিরা। ঈদগাহে যাওয়ার জন্য চামড়ার স্যান্ডেল অনেকের পছন্দ। নারীদের, বিশেষ করে তরুণীদের অনেকেই পোশাকের রং ও নকশার সঙ্গে মিলিয়ে স্যান্ডেল কেনেন। বসুন্ধরা সিটির ব্র্যান্ডের জুতার দোকান ‘বে এম্পোরিয়াম’-এর বিক্রয়কর্মী ইব্রাহিম খলিল জানালেন, ঈদের সময়ের বিক্রি তাঁদের প্রায় সারা বছরের সমান।
বাটা, অ্যাপেক্স, লোটো, ওরিয়ন, বের মতো নামী ব্র্যান্ডের দোকানের কর্মীরা জানান, প্রতি ঈদেই জুতার নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। এ বছর প্রায় ৮০০ নতুন নকশার জুতা-স্যান্ডেল এনেছে বাটা। শুধু ঢাকাতেই তাদের রয়েছে ৮৫টি বিক্রয়কেন্দ্র। ৪৫০ থেকে ১৩ হাজার টাকায় বাটার জুতা পাওয়া যাচ্ছে। বাটার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রে নাইকি ও অ্যাডিডাসের মতো বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের জুতা-স্যান্ডেলও পাওয়া যাচ্ছে। বসুন্ধরায় প্রতিষ্ঠানটির সব থেকে বড় বিক্রয়কেন্দ্রে গতকাল বিকেলে কথা হয় জুতা কিনতে আসা তরুণ চিকিৎসক দম্পতি কিশোরগঞ্জের মামুনুর রশীদ ও ফারিয়া তাবাসসুমের সঙ্গে। তাঁরা জানান, এবার নতুন কী ধরনের জুতা এসেছে আগে তা যাচাই করে দেখবেন।
বাটার অন্যতম জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক রাজিব জাহান বলেন, এ বছর বাটা বিডি ডটকম থেকে অনলাইনে অর্ডার করলে ডেলিভারি চার্জ ছাড়াই পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। বিকাশে এর মূল্য পরিশোধ করলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাবে।
ঈদ সামনে রেখে গত সপ্তাহে জুতার বাজারে এসেছে নতুন ব্র্যান্ড ‘ভাইব্র্যান্ট’। জুতা-স্যান্ডেল-বেল্ড-ব্যাগসহ চামড়ার প্রায় সব ধরনের পণ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। শিগগির ঢাকা ও অন্য জেলাগুলোতে বিক্রয়কেন্দ্র খুলবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আল মোসাদ্দেক জানান, শুরুতেই ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে চান তাঁরা। সে জন্য মানের দিকে কঠোরভাবে নজর রেখেছেন। তিনি বলেন, জুতা-স্যান্ডেল দীর্ঘ সময় পরে থাকতে হয় বলে ক্রেতার আরামের কথা সব সময় মাথায় রাখেন তাঁরা। ৩৯০ থেকে ৭ হাজার টাকায় জুতা পাওয়া যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির মৌচাক ও গুলশানের বিক্রয়কেন্দ্রে।
বিদেশি ব্র্যান্ড লোটোর কর্মকর্তা তন্ময় মিত্র জানান, প্রায় ৬০ শতাংশ পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন তাঁরা। ঈদে তাঁদের শতাধিক নকশার জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যাবে ২৯০ থেকে ৯৯০ টাকায়। সারা বছর একটু সাশ্রয়ী পণ্য চললেও ঈদের সময় দামি জুতার বিক্রি বেশি। ঢাকায় তাঁদের রয়েছে ২২টি বিক্রয়কেন্দ্র।
দেশের অন্যতম বৃহৎ জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স। বসুন্ধরায় তাদের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ৭০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। এবারের ঈদে এক হাজারের বেশি নকশা এনেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোহেব আহমদ জানান, ঢাকায় ৯৫টি ও সারা দেশে ২৫০টি বিক্রয়কেন্দ্র তাঁদের।
এ ছাড়া জেনিস, ফ্রিল্যান্ড, ওটু, আড়ংয়ে পাওয়া যাচ্ছে সব বয়সী মানুষের স্যান্ডেল ও জুতা। মানের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকেরই চেষ্টা ক্রেতাকে সেরা পণ্যের অভিজ্ঞতা দেওয়ার। মানের সঙ্গে সংগতি রেখে জুতার দামের তারতম্য হয়।
No comments:
Post a Comment