![]() |
বুলগেরিয়ার বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা তিন বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি গড়েছিলেন পেলে। তবে সুস্থ থেকে মাঠ ছাড়তে পারেননি। বুলগেরিয়ান ডিফেন্ডারদের নির্মম ফাউলের শিকার হয়েছিলেন। যে কারণে হাঙ্গেরির বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলতে পারেননি আর ব্রাজিলও জিততে পারেনি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের জেতার বিকল্প ছিল না। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও পেলে তাই ফিরেছিলেন মাঠে।
পর্তুগালের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ‘কালোমানিক’ তাঁর দেশের ভাগ্য পাল্টাতে পারেননি। পর্তুগালের কাছে ৩-১ গোলের হারে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। এই ম্যাচেও পেলে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন। পর্তুগিজ ডিফেন্ডার হোয়াও মরিস তাঁকে নির্মম ফাউল করলেও রেফারি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পেলেও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বিশ্বকাপে আর খেলবেন না। যদিও মানুষ প্রতিজ্ঞা করেই তা ভাঙার জন্য। পেলেও তাই ফিরেছিলেন পরের বিশ্বকাপেই। বাকিটা তো ইতিহাস। তবে ’৬৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে না পড়লে পেলে হয়তো আরেকটি ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেতেন।
সেটা গোলের ইতিহাস গড়ার সুযোগ। চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন পেলে। এর মধ্যে ’৬৬ বিশ্বকাপে ২ ম্যাচ খেলে মাত্র ১ গোল করেছেন ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তি। ব্রাজিল নকআউট পর্বে উঠলে হয়তো তাঁর গোলসংখ্যা বাড়ত। তাহলে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফরোয়ার্ড বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের পরিসংখ্যানে হয়তো এতটা পিছিয়ে থাকতেন না। মিরোস্লাভ ক্লোসা (১৬), রোনালদো (১৫), গার্ড মুলার (১৪), জাঁ ফন্টেইন (১৩) এবং তারপর পেলে—গোলসংখ্যা ১২।
‘লুজানের উত্তপ্ত যুদ্ধ’-এর কথা মনে আছে? গোলাবারুদের কোনো যুদ্ধ নয় আবার এক ধরনের যুদ্ধও। ইতিহাসে তা ‘দ্য হিট ব্যাটল অব লুজান’—যে মঞ্চে অস্ট্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল সুইজারল্যান্ড। সেটা ১৯৫৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কথা। সেদিন গরমটা একটু বেশিই পড়েছিল, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার প্রভাব পড়েছে মাঠের খেলাতেও। না, মাথা গরম করে কোনো খেলোয়াড় যুদ্ধে জড়াননি। তবে ‘গোলযুদ্ধ’ চলেছে গোটা ম্যাচেই।
১৯ মিনিটের মধ্যে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রিয়া গড়ল ইতিহাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়া থেকে ঘুরে দাঁড়াল দলটি। প্রথমার্ধেই তাঁরা ৫ গোল করল! শেষ বাঁশি বাজার পর স্কোরলাইন অস্ট্রিয়ার পক্ষে ৭-৫ গোলের জয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ গোল, ১২।
রবার্তো রোহাস তারকা গোছের কোনো গোলরক্ষক ছিলেন না। তবে দেশকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ারটাই বিসর্জন দিয়েছিলেন। ইতিহাস তাঁকে সে কর্মটির জন্যই মনে রেখেছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল চিলি। মারাকানায় অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচটা হারলে বাছাইপর্ব থেকেই ছিটকে পড়ত চিলি। এই সমীকরণের মুখে তারা পিছিয়ে ছিল ১-০ গোলে। এই অবস্থায় হঠাৎ করেই একটা কাণ্ড ঘটল।
প্রায় ৭০ মিনিটের মাথায় নিজের কপাল ধরে মাঠেই শুয়ে পড়লেন চিলির গোলরক্ষক রবার্তো রোহাস। গ্যালারি থেকে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকেরা বাজি-পটকা ছুড়ে মারায় ধরেই নেওয়া হয় রোহাস হয়তো সে কুকর্মেরই শিকার। তাঁর কপাল বেয়ে রক্তও ঝরছিল। এই অবস্থায় নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখিয়ে চিলির খেলোয়াড়েরা আর মাঠে নামেননি। ম্যাচটা অমীমাংসিত থাকায় চিলির আশাও টিকে থাকে। কিন্তু পরে ম্যাচের ভিডিওতে দেখা গেল, রোহাস বাজি-পটকার জন্য আহত হননি। তিনি আসলে নিজেই নিজেকে আহত করেছেন! কিপিং গ্লাভসের মধ্যে ‘রেজর’ লুকিয়ে রেখেছিলেন। সুযোগ বুঝে তা নিজেই নিজের কপালে ব্যবহার করে শুয়ে পড়েন মাঠে।
ফিফা বসে থাকেনি। তাৎক্ষণিকভাবে ব্রাজিলকে ২-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয় চিলিকে। আর রোহাসকেও আজীবন নিষিদ্ধ করে ফিফা। তবে আজীবন তিনি নিষিদ্ধ থাকেননি, ২০০১ সালে ঘটনার ১২ বছর পর ফিফা তাঁর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
No comments:
Post a Comment